বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৭ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ধর্ষণের শিকার হয়ে যখন অসুস্থ তরুণীটি কাঁদছিলেন তখন ইউপি সদস্য তাঁর কাছে গিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আর সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েই তুলে নিয়ে ওই তরুণীকে কয়েক দফা ধর্ষণ করেন ইউপি সদস্য নিজেও। আর তরুণীটি যেন পুলিশকে ঘটনা জানাতে না পারেন-এরও সব ব্যবস্থা করেছিলেন ওই ইউপি সদস্য। নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাড়ি ঘিরে পাহারাও বসিয়েছিলেন।
কিন্তু গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে ইউপি সদস্যের সহযোগীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে থানায় গিয়ে হাজির হন ওই তরুণী। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নে।
এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে নির্যাতিত তরুণী আলাদা দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় আসামিরা হলেন- কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (এক নম্বর ওয়ার্ড) কলিম উদ্দিন (৪০) ও নয়াপাড়া গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে পারভেজ আহমেদ (২৮)। ইউপি সদস্য কলিম উদ্দিন ওই গ্রামের আবদুল হেকিমের (মৃত) ছেলে। নির্যাতনের শিকার তরুণী পাশের গ্রামের একজন কৃষিশ্রমিকের মেয়ে। এদিকে পারভেজ আহমেদ ওই ইউপি সদস্য কলিম উদ্দিনের মালিকানাধীন একটি পিকআপভ্যানের চালক বলে জানা গেছে।
আজ সকালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ পারভেজকে গ্রেপ্তার করেছে। কলিম উদ্দিন পলাতক রয়েছেন।
তরুণী জানান, তিনি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। কারখানায় যাওয়া-আসার পথে পারভেজের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আর পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রায় ৯ মাস আগে পারভেজের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিয়ে করার কথা বলে পারভেজের বাড়িতে নিয়ে যান তাঁকে। কিন্তু বিয়ে না করে ওই রাতে তাঁর ওপর কয়েক দফা নির্যাতন চালান পারভেজ। এতে তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ভোর হতেই তাঁকে রেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান পারভেজ।
কান্নায় ভেঙে পড়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী আরো জানান, ওই দিনই সকাল ৮টার দিকে ইউপি সদস্য কলিম উদ্দিন ওই বাড়িতে যান। তাঁর কাছ থেকে ঘটনা জেনে পারভেজের সঙ্গে বিয়ের উদ্যোগ নেবেন বলে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান তাঁকে।
সরকারি শালবনের ভেতর একটি পরিত্যক্ত বাড়ির রান্নাঘরে নিয়ে কলিম উদ্দিনও তাঁকে কয়েক দফা ধর্ষণ করেন।
তরুণী অভিযোগ করেন, পরপর ধর্ষণের ঘটনা কেউ জানলে তাঁকেসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন ইউপি সদস্য।
কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই তরুণী জানান, বাড়ি ফিরে তাঁর মা-বাবাকে ঘটনাটি জানান তিনি। ওই দিনই তিনি থানায় যেতে চাইলেও ইউপি সদস্যের কয়েকজন সহযোগী তাঁকে বাধা দেন। তাঁর বাড়ি ঘিরে পাহারায় রাখত তাঁরা। তিনি অভিযোগ করেন, এরই মধ্যে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আপসরফার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন কলিম উদ্দিন।
এদিকে কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজিজুল হক বলেন, ইউপি সদস্যকে জড়িয়ে যে মামলাটি, তা ষড়যন্ত্রমূলক। ঘটনাটি ঘটিয়েছেন পারভেজ। ওই ঘটনার বিচার না করায় শেষে ইউপি সদস্যকেও জড়িয়েছেন ওই তরুণী। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খান বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে নির্যাতনের শিকার তরুণী থানায় এসে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। পরে ওই রাতেই ধর্ষণের অভিযোগে আলাদা দুটি মামলা নেওয়া হয়। অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ধর্ষক পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউপি সদস্য কলিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
থানায় আসতে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে পরিদর্শক (তদন্ত) আরো বলেন, নির্যাতনের শিকার তরুণী যদি এমন অভিযোগ করেন, তাহলে তাঁকে (তরুণী) বাধা দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও মামলা নেওয়া হবে।
Leave a Reply